উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০/০৮/২০২২ ৭:৪৫ এএম , আপডেট: ৩০/০৮/২০২২ ১০:৪৯ এএম
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অত্যন্ত ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ হলেও নিত্যদিনের চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই- এটি কোন ধরনের গাড়ির জন্য তৈরি। ৬৬ কিলোমিটার সড়কেই নছিমন-করিমন, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত বিভিন্ন অটোরিকশার দৌরাত্ম্য। চলাচলে বিঘ্ন ঘটিয়ে বিস্তীর্ণ জায়গা নিয়ে করা হয়েছে স্টেশন। প্রবেশমুখ আটকে সারি সারি করে রাখা হয় তিন চাকার যান। ইচ্ছামতো এগুলোতে চলছে যাত্রী ওঠানামা। এসব দৃষ্টিগোচর হয় না হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্নিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। কারণ, অটোরিকশা নিয়ে চলে রমরমা বাণিজ্য। প্রশাসনকে ম্যানেজ করার নামে কমিশন নেয় মালিক-শ্রমিকদের বিভিন্ন সমিতি ও সংগঠন। মাসোহারা পায় পুলিশ।

মহাসড়কের কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত ৬৬ কিলোমিটার এক রকম অবৈধ যানের দখলে চলে গেছে। চলার পথে এদের দৌরাত্ম্য এতই বেশি যে, অন্যদের সাইড দিতে চায় না। এদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বাস-ট্রাকসহ ভারী যানগুলোকে। পাশ কাটিয়ে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয় বড় বড় গাড়ি। এতে প্রায়ই ঘটে প্রাণহানির ঘটনা। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। এগুলোকে সুযোগ দিতে গিয়ে পুলিশ অন্যদের হয়রানি করায় ক্ষোভ বাড়ছে বৈধ যানবাহনের মালিক-শ্রমিকদের।

২০১৫ সালে দেশের ২২ মহাসড়কে সব ধরনের অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে উচ্চ আদালতও এসব যানবাহন বন্ধের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও হাইওয়ে পুলিশকে নির্দেশ দেন। এর পরও পাল্টেনি সড়কের চিত্র। এতে ভারী যানবাহন চলছে ধীরগতিতে, সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। শুধু তাই নয়; মইজ্জ্যারটেক থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত অন্তত ২০ স্থানে মহাসড়কের ওপর অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে অটোরিকশা, টেম্পো ও ট্রাক-পিকআপ স্ট্যান্ড। প্রবেশদ্বার মইজ্জ্যারটেক মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনেই আছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবৈধ স্টেশন। এ ছাড়া ওই স্থানে বাস, ট্রাক, লেগুনা ও সিএনজি থামিয়ে চালকরা যাত্রী ওঠানামা করে। তবে দেখেও দেখে না কেউ।

গত ২৮ আগস্ট সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মইজ্জ্যারটেক মোড় থেকে লোহাগাড়ার আমিরবাদ পর্যন্ত মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, এ রাস্তা দিয়ে অসংখ্য পা-চালিত ও ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নছিমন-করিমন-ভটভটি অবাধে চলছিল। কোথাও কোথাও চলাচল করছিল উল্টো পথে। এ ছাড়া কর্ণফুলীর শিকলবাহা ক্রসিং ও মইজ্জ্যারটেক এলাকা, পটিয়ার কমলমুন্সির হাট, বাসস্টেশন, ডাকবাংলোর মোড়, থানার মোড়, মুন্সেফবাজার, শান্তিরহাট, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার দোহাজারী, দেওয়ানহাট ও বাগিচারহাট, গাছবাড়িয়া কলেজ বাজার, খানহাট বাজার ও রৌশনহাটে সড়কের উভয় পাশে দাঁড়িয়ে থাকে অটোরিকশা। একই কারণে সাতকানিয়ার কেরানীহাট এলাকায়ও প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, উপজেলার কমলমুন্সির হাট থেকে শান্তিরহাট পর্যন্ত সড়কে ছয় মাসে ৪০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন। তাঁদের মধ্যে গত ১১ জুলাই পটিয়ার ভাইয়ারদীঘির পাড় এলাকায় বাস-সিএনজি, অটোরিকশা সংঘর্ষে সাতজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। এর এক সপ্তাহের মধ্যে ১৯ জুলাই একই স্থানে তেলবাহী ট্রাকচাপায় দুই সাইকেল আরোহী নিহত হন।

হানিফ পরিবহনের চালক মো. রাশেদ বলেন, অবৈধ এসব যানের কারণে আমাদের ধীর গতিতে চলতে হয়। সাতকানিয়ার কেরানীহাট মোড় থেকে কর্ণফুলী টোল প্লাজা পর্যন্ত এসব গাড়ি উল্টো পথে চলার কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। প্রতিদিন যানজটে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
সাতকানিয়ার কেরচিয়া গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল আলম বলেন, মহাসড়কে ছোট ছোট যানবাহনের কারণে আমরা সব সময় দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকি। রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে ভয় লাগে- কখন কোন গাড়ি কার ওপর উঠিয়ে দেয়! গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কের চিত্র যেন দেখেও না দেখার ভান করেন প্রশাসনের লোকজন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ বলেন, অটোরিকশা জনগণের প্রয়োজনে চলে। মহাসড়কের উভয় পাশের বাসিন্দাদের বাধ্য হয়ে এসব যানবাহনে চলতে হয়। এগুলো উঠিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। এদের জন্য মহাসড়কের পাশে আলাদা লেন করতে হবে।
মো. ইব্রাহিম নামে এক অটোরিকশাচালক বলেন, পেটের দায়ে সড়কে নামি। আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা না করে চলাচল নিষিদ্ধ করা ঠিক হবে না। তবে মাঝেমধ্যে পুলিশ আমাদের বাধা দেয়; পরে সমিতির নেতারা পুলিশকে ম্যানেজ করেন।

পরিবহন-সংশ্নিষ্টরা জানান, এই মহাসড়কে বৈধ যানবাহনের চেয়ে অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা বেশি। মালিকরা পুলিশকে টাকা দিয়ে এসব যান সড়কে নামান। অধিকাংশ অটোরিকশার জন্য পুলিশকে মাসিক ভিত্তিতে টাকা দিতে হয়। এ কারণে পুলিশও এসব যানবাহনকে হয়রানি করে না; মামলা দেয় না।

পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আমার দুটি কার ও একটি হায়েস চলে। কাগজপত্র ঠিক থাকলেও পুলিশ নানাভাবে হয়রানি করে; অযথা দীর্ঘ সময় আটকে রাখে। তবে অনেক গাড়ির ফিটনেস, রুট পারমিট ও লাইসেন্স না থাকলেও সড়কে চলছে আপন মেজাজে। এসব যানবাহন কীভাবে চলে, তা কারও অজানা নয়। পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব গাড়ি মহাসড়কে চলাচল করায় ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।

তবে কোনো অনিয়মের সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ জড়িত নয় দাবি করে দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি মাকসুদ আহমেদ বলেন, মাঝেমধ্যে আমাদের অগোচরে কিছু অটোরিকশা মহাসড়কে চলাচল করে। চোখে পড়লে আটকে দেওয়া হয়। প্রতিদিনই এসব যানের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। সুত্র : সমকাল

পাঠকের মতামত

কক্সবাজার শহর থেকে সেন্টমার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ

কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ। আইনগত বিধি নিষেধ থাকায় উখিয়ার ...

উখিয়ায় নিখোঁজের ১৭ ঘণ্টা পর স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং উত্তর সোনারপাড়া এলাকার রেজুখাল থেকে নিখোঁজ হওয়া স্কুলছাত্র শাহীন সরওয়ার ফরহাদের ...